Subject Review - Biochemistry and Molecular Biology
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি-র বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান। সোজা ভাষায় এই সাবজেক্টে প্রাণের রসায়ন নিয়ে গল্প সল্প করে আর জীবনকে ব্যাখ্যা করে আণবিক পর্যায়ে। তোমার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তুমি কি কর, কেন কর, কেন সুখী হও, কেন দুখি হও, কিভাবে এত বড় হলে, কেন বুড়ো হবে,এমনকি কেন প্রেম কর সেটাও আলাপ আলোচনা করে এই সাবজেক্ট। মরলেও রেহাই নেই। তোমার ডিএনএ খুঁজে বায়োকেমিস্ট বলে দিতে পারবেন, তুমি কে, কি তোমার পরিচয়।
এই সাবজেক্টে পড়ে তুমি যদি কম্পিউটার প্রোগ্রামার হতে চাও হতে পারবে (Bioinformatics ), যদি হতে চাও পদার্থবিদ (Biophysics) তাও পারবে, যদি হতে চাও প্রকৌশলী (Bio Engineer/ Genetic Engineer) তাও পারবে। যদি হতে চাও এলিয়েনবিদ (Alien Biology) তাও পারবে। মানুষের শরীরে কিভাবে রোগ জীবাণু আক্রমন করে, আমাদের দেহের Immune সিস্টেম (Immunology) কিভাবে সৈন্য সামন্ত নিয়ে সেটা প্রতিরোধ করে, না পারলে আমরা কিভাবে ওষুধ বানিয়ে (Pharmacy) সেগুলো ধ্বংস করতে পারি এত্ত সব মজার জিনিস দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আমাদের নিজেদের কিছু কোষ কিভাবে রাজাকার হয়ে আমাদের ক্ষতি করে ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায় (Oncology) তাও বুঝতে পারবে।
এই সাবজেক্টের কিছু রহস্যময় আর রোমাঞ্চকর দিক আছে। যেমনঃ কিভাবে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে এক্স-মেনদের মত মানুষ অথবা অন্য প্রানী বানানো যায়, যে কোন প্রাণীর কাছ থেকে একটু কোষ নিয়ে ক্লোনিং করে হুবহু একই রকম আরেকটি প্রাণী বানানো যায়, স্টেম সেল দিয়ে কিভাবে নতুন হাত পা ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ একবারে নতুন করে তৈরি করা যায় ইত্যাদি।
গত শতাব্দী ছিল ভৌত বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির। এই শতাব্দী হচ্ছে প্রাণরসায়নের। বিজ্ঞানের এই দিকটা এখনও মানুষের কাছে বেশিরভাগই অজানা।প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। যেমন ধর ই-বোলা ভাইরাস। এখনও এইডস আর ক্যানসারের ভাল কোন ওষুধ আবিস্কার হয়নি। তাই সারা পৃথিবীতে প্রাণরসায়ন নিয়ে চলছে প্রচুর গবেষণা। আগামী শতাব্দীর সব চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করতে আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে অনেক গবেষণা। এরই মধ্যে তোমরা পাটের জিনোম প্রজেক্টের কথা জান। শুনেছ ড. মাকসুদুল আলমের কথা। পুরো বিশ্বে বিজ্ঞানের এই দিকটায় বাংলাদেশি আরও অনেকে আছেন যারা তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।
সবার প্রশ্ন থাকে চাকরি কোথায় এই সাবজেক্টের। সারা পৃথিবীতে চাকরির ব্যাপারটাই ধাঁধার মত। কেউ হয়ত প্রকৌশলী কিন্তু চাকরি করে ব্যাংকে। আজকাল ডাক্তাররাও এমবিএ করে। তুমি যদি মনে কর এবং দিন শেষে প্রমান কর তুমি কেউ একজন তাহলে চাকরি তোমার পেছনে ঘুরবে।
বাংলাদেশে বায়োকেমিস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়ার চমৎকার সব সুযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্টধারীগণ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ লাভ করেন। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বায়োকেমিস্টগণ
* বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে শিক্ষকতা,
* বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানি,
* বায়োটেকনোলজি কোম্পানি,
* কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি,
* ফুড ইন্ডাস্ট্রি,
* ফরেনসিক ল্যাব,
* হসপিটাল,
* ডায়াগনোস্টিক ল্যাব,
* কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদিতে কাজ করতে পারেন।
এসবের বাহিরেও বায়োকেমিস্ট্রিতে ডিগ্রিধারীগেণর জন্য বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যবসা ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।
সরকারি চাকুরীঃ
বাংলাদেশের সরকারি চাকুরীগুলোতে শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসাবে ন্যুনতম যে কোন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী হলেই যেহেতু অাবেদন ও চাকুরী পাওয়া যায় সেহেতু বায়োকেমিস্ট্রিও মলিকুলার বায়োলজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারীদের বাংলাদেশের সরকারী চাকুরীতে অাবেদন করার ও নিয়োগ লাভের প্রচুর সুযোগ অাছে। বায়োকেমিস্ট্রিও মলিকুলার বায়োলজিতে ডিগ্রিধারীরা একদিকে যেমন বিসিএস দিয়ে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান করতে পারবেন তেমনি ৩১তম বিসিএস হতে বায়োকেমিস্ট্রি সাধারন শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত হওয়ায় অাপনারা বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডারে ও যোগদান করতে পারবেন অর্থাৎ বিসিএস জেনারেল এবং টেকনিক্যাল উভয় ক্যাটাগরিতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাকুরি করার সুযোগ পাবেন।তাছাড়া একজন স্নাতকোত্তর হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের চাকুরি ও পিএসসির ( নন ক্যাডার) চাকুরি লাভের অবারিত সুযোগ রয়েছে।। মোট কথা, সবার জন্য উন্মুক্ত যে সকল চাকুরি রয়েছে সেই সকল চাকুরিতে বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র/ছাএীরা অাবেদন করতে পারবেন এবং যদি স্বীয় যোগ্যতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারেন তাহলে চাকুরিগুলো অাপনাদের হওয়ারও সম্ভবনা থাকবে প্রচুর।
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি( টেকনিক্যাল পদ) সংশ্লিষ্ট চাকুরীঃ
বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারীরা সাধারনত
বিসিএসঅাইঅার,
অাইসিডিডিঅারবি,
বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন,
ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউড অব বায়োটেকনোলজি,
বাংলাদেশ চা বোর্ড,
বারডেম,
বিসিঅাইসি,
বিএসএমএমইউ (পিজি),
বাংলাদেশ ডায়াবেটিকস অাস্যোসিয়েশন,
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশন্যাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইল ল্যাবরেটরীর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,
বিএসটিঅাই ও বাংলাদেশ এ্যাক্রোডিটেশন বোর্ড এর পরীক্ষক,
ওয়াসা এর সহকারী রসায়নবিদ ও সহকারি জীবানুবিদ,
বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের অধীন সহকারি রসায়নবিদ ও প্রানরসায়নবিদ,
শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীন ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের পেটেন্ট ডিজাইনার (প্রানরসায়ন),
স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের অধীন ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ড্রাগ সুপার, ড্রাগ ইন্সপেক্টর, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,
শিশু হাসপাতালের অধীন সি এইচ অার এফ এর রির্সাচ অফিসার,
বাংলাদেশ পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ
প্রভৃতি সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
ব্যাংক ও বীমা সংশ্লিষ্ট চাকুরীঃ
স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী হিসাবে বায়োকেমিস্ট্রিও মলিকুলার বায়োলজির শিক্ষার্থীরা সাধারনত বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার, সিনিয়র অফিসার, সহকারি ব্যাবস্হাপক এবং সরকারি বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমাতে অফিসার, সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। বেসরকারি ব্যাংকে যেহেতু এমবিএ ডিগ্রীধারীদের বেশি প্রাধান্য দেয় তাই বায়োকেমিস্ট্রির শিক্ষার্থীদের বেসরকারী ব্যাংকে ভাল চাকুরি পেতে গেলে অবশ্যই এমবিএ ডিগ্রী নিতে হবে, তা না হলে বেসরকারি ব্যাংকে ভাল পোস্টে অাপনারা কাজ করার তেমন সুযোগ পাবেন না।মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ল্যাব সংশ্লিষ্ট চাকুরীঃ
দেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকল্যাবে বায়োকেমিস্ট্রিও মলিকুলার বায়োলজিতে অধ্যায়নকৃত শিক্ষার্থীদের চাকুরি করার অবারিত সুযোগ অাছে। যেহেতু এই সেক্টরটাতে খুব সহজেই চাকুরি পাওয়া যায় তাই এই বিভাগে অধ্যায়নকৃতদের বেকার থাকতে হয় না।
মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এই বিভাগের অধ্যয়নকৃতরা মূলত বায়োকেমিস্ট, সায়েন্টিফিক অফিসার, রিপোর্ট ট্রান্সক্রিপ্টশনিস্ট, রির্সাচ অফিসার, জুনিয়র কনস্যালট এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি কোর্সেরর লেকচার, ফার্মাসিউটিক্যালে এক্সিকিউটিব অফিসার, ম্যানেজার, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারসহ আরো।কেমিক্যাল রিলেটেড সকল ইনডাস্ট্রিজে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, কোয়ালিটি এসুরেন্স সহ অারো, এমনকি টেক্সটাইলে কোয়ালিটি কনট্রলার হিসেবে জব রয়েছে। এছাড়া আমার জানার বাইরেও আছে অনেক..
এবার বলি মলিকুলার বায়োলজির কথা...
বিজ্ঞান চর্চার প্রাথমিক যুগের সূচনা ঘটেছিল গণিত চর্চার মধ্য দিয়ে। মধ্যযুগে তা পদার্থবিদ্যার বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। ধীরে ধীরে নিউটন, গ্যালিলিও, আইনস্টাইন, বোরের তত্ত্ব একে আধুনিক যুগে নিয়ে আসে। কিন্তু, 1920 এর আবিষ্কারের ধারা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তখন, বিজ্ঞানীরা ঝুকতে থাকে পরিবেশ, পৃথিবী, মানুষ, জীবজগৎ নিয়ে গবেষণার দিকে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীকে তাই নিঃসন্দেহে বলা হচ্ছে The Century of Biological Science. এর কারণ 1972 সালে পল বার্গের রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজি বা মলিকুলার ডকিং এর আবিষ্কার।
প্রাণ রসায়ণের সবচেয়ে আধুনিক একটি শাখা মলিকুলার বায়োলজি! যেখানে জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা হয় অণু-পরমাণু পর্যায়ে, একে বলা হয় "The Molecular Logic Of Life"। A-T-C-G এই মাত্র চারটি হরফে লেখা এ বিষয়কে বলা হয় Language of GOD. মলিকুলার বায়োলজি মূলত ট্রান্সজেনিক (উন্নত বৈশিষ্টধারী) উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতে কাজ করে। এর একটি শাখা জেনেটিক্স, জীববিজ্ঞানের এ শাখাটিতেই নিজের ইচ্ছামত ডিজাইন করে একটি প্রাণী সৃষ্টি করা যায়, ডিজাইন করা যায় নিজের পছন্দের ই.কোলাই যে কিনা নিজের কথামত উঠবে বসবে। কাজটা অনেকটা একটা কম্পউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন করার মত, যা তোমার আদেশ সম্পূর্ণ মেনে চলে। চিন্তা করে দেখ, ব্যাপারটা একজন আবিষ্কারকের জন্য কতটা রোমাঞ্চকর যখন সম্পূর্ণ জীবন্ত কিছু একটা নিজের ডিজাইন মত কাজ করছে? . মলিকুলার বায়োলজি ভালো করে জানতে হলে মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োস্ট্যাটিসটিক, ইমিউনোলজি, ওর্গানিক কেমিস্ট্রি, এনজাইমোলজি, ইনসিলিকো (কম্পিউটেশনাল) বায়োলজি, টিস্যু কালচার ইত্যাদি ভালোভাবে জানতে হবে।
একজন মলিকুলার বায়োলজিস্ট একাধারে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট কারণ, নিজের ব্যাকটেরিয়াগুলো তাকে পেটরি ডিসে জন্মাতে হয়; সে একজন বায়োকেমিস্ট কারণ নিজের সৃষ্টি জীব থেকে সংগৃহীত প্রোটিন তাকে বিশ্লেষণ করতে হয়; সে একজন পরিসংখ্যানবিদ কারণ 3.2 বিলিয়ন বেস পেয়ারের মাঝে তাকে ধারণা করে কাজ করতে হয়; সে একজন অর্গানিক কেমিস্ট কারণ নিজের আবিষ্কৃত ওষুধের মলিকিউলার গঠন তাকে বের করতে হয় এবং পরিশেষে একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী কারণ বিশাল ডিএনএ এনালাইসিসের জন্য তাকে সফটওয়্যার ডিজাইন করতে হয়।
কি কি গুণ লাগবে বিশ্বের আধুনিকতম এ বিষয়ে পড়তে? তোমাকে হতে হবে খুবই অভূতপূর্ব চিন্তাবিদ, কঠোর পরিশ্রমী, মানবিক গুণসম্পন্ন বিশেষ করে দেশপ্রেমিক। পাশাপাশি ঝানু হতে হবে জীববিজ্ঞান, জৈব রসায়ন এবং প্রোগ্রমিং এ। চিন্তা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে এমন কিছু করা সম্ভব যা কেউ ভাবতেও পারে না। আজগুবি চিন্তা করতে জানতে হবে। হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী।
নেচার ম্যাগাজিনের কভারের প্রতিদিনিই জায়গা করে নিচ্ছে জাপান, আমেরিকার মলিকুলার বায়োলজিস্ট রা। এ বছর ২০১৬ তে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যিনি নোবেল পেলেন তিনি একজন মলিকুলার বায়োলজিস্ট।
সবার সব ব্যাপার সবসময় ভাল লাগেনা। বায়োকেমিস্ট্রি এই ব্যাপারটা বেশি প্রশ্রয় দেয় কারন বায়োকেমিস্ট্রি পড়তে সবই দরকার হয়। যা খুশি হতে পার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তোমার কি করতে ভাল লাগে আর কি করলে তুমি সুখী হবে। তাই চাকরির নিয়ে বেশি কথা না বলি।
তোমরা গুগল দৈত্যে সার্চ দিলেই সারাবিশ্বে এই সাবজেক্টের চাকরি কোথায় সব জানতে পারবে। আরেকটু বেশি উৎসাহী হলে এই সাবজেক্টের স্যালারি নিয়েও সার্চ দিয়ে দেখতে পার। অনেকেই মনে করতে পার যে বায়োকেমিস্ট্রিতে যেহেতু বায়োলজি আর কেমিস্ট্রি আছে তাই প্রচুর মুখস্ত করতে হয়। এই ধারনা কতটুকু ভুল সেটা বুঝতে ইউটিউবে বিখ্যাত Eric Lander এর লেকচার দেখতে পার। এই ভদ্রলোক গণিত শাস্ত্রে পিএইচডি শেষে এখন MIT তে মলিকুলার বায়োলজি পড়ান!
মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে এই বিভাগের অধ্যয়নকৃতরা মূলত বায়োকেমিস্ট, সায়েন্টিফিক অফিসার, রিপোর্ট ট্রান্সক্রিপ্টশনিস্ট, রির্সাচ অফিসার, জুনিয়র কনস্যালট এছাড়া, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি কোর্সেরর লেকচার, ফার্মাসিউটিক্যালে এক্সিকিউটিব অফিসার, ম্যানেজার, রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারসহ আরো।কেমিক্যাল রিলেটেড সকল ইনডাস্ট্রিজে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, কোয়ালিটি এসুরেন্স সহ অারো, এমনকি টেক্সটাইলে কোয়ালিটি কনট্রলার হিসেবে জব রয়েছে। এছাড়া আমার জানার বাইরেও আছে অনেক..
এবার বলি মলিকুলার বায়োলজির কথা...
বিজ্ঞান চর্চার প্রাথমিক যুগের সূচনা ঘটেছিল গণিত চর্চার মধ্য দিয়ে। মধ্যযুগে তা পদার্থবিদ্যার বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। ধীরে ধীরে নিউটন, গ্যালিলিও, আইনস্টাইন, বোরের তত্ত্ব একে আধুনিক যুগে নিয়ে আসে। কিন্তু, 1920 এর আবিষ্কারের ধারা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তখন, বিজ্ঞানীরা ঝুকতে থাকে পরিবেশ, পৃথিবী, মানুষ, জীবজগৎ নিয়ে গবেষণার দিকে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীকে তাই নিঃসন্দেহে বলা হচ্ছে The Century of Biological Science. এর কারণ 1972 সালে পল বার্গের রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজি বা মলিকুলার ডকিং এর আবিষ্কার।
প্রাণ রসায়ণের সবচেয়ে আধুনিক একটি শাখা মলিকুলার বায়োলজি! যেখানে জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা হয় অণু-পরমাণু পর্যায়ে, একে বলা হয় "The Molecular Logic Of Life"। A-T-C-G এই মাত্র চারটি হরফে লেখা এ বিষয়কে বলা হয় Language of GOD. মলিকুলার বায়োলজি মূলত ট্রান্সজেনিক (উন্নত বৈশিষ্টধারী) উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতে কাজ করে। এর একটি শাখা জেনেটিক্স, জীববিজ্ঞানের এ শাখাটিতেই নিজের ইচ্ছামত ডিজাইন করে একটি প্রাণী সৃষ্টি করা যায়, ডিজাইন করা যায় নিজের পছন্দের ই.কোলাই যে কিনা নিজের কথামত উঠবে বসবে। কাজটা অনেকটা একটা কম্পউটার প্রোগ্রাম ডিজাইন করার মত, যা তোমার আদেশ সম্পূর্ণ মেনে চলে। চিন্তা করে দেখ, ব্যাপারটা একজন আবিষ্কারকের জন্য কতটা রোমাঞ্চকর যখন সম্পূর্ণ জীবন্ত কিছু একটা নিজের ডিজাইন মত কাজ করছে? . মলিকুলার বায়োলজি ভালো করে জানতে হলে মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োস্ট্যাটিসটিক, ইমিউনোলজি, ওর্গানিক কেমিস্ট্রি, এনজাইমোলজি, ইনসিলিকো (কম্পিউটেশনাল) বায়োলজি, টিস্যু কালচার ইত্যাদি ভালোভাবে জানতে হবে।
একজন মলিকুলার বায়োলজিস্ট একাধারে একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট কারণ, নিজের ব্যাকটেরিয়াগুলো তাকে পেটরি ডিসে জন্মাতে হয়; সে একজন বায়োকেমিস্ট কারণ নিজের সৃষ্টি জীব থেকে সংগৃহীত প্রোটিন তাকে বিশ্লেষণ করতে হয়; সে একজন পরিসংখ্যানবিদ কারণ 3.2 বিলিয়ন বেস পেয়ারের মাঝে তাকে ধারণা করে কাজ করতে হয়; সে একজন অর্গানিক কেমিস্ট কারণ নিজের আবিষ্কৃত ওষুধের মলিকিউলার গঠন তাকে বের করতে হয় এবং পরিশেষে একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী কারণ বিশাল ডিএনএ এনালাইসিসের জন্য তাকে সফটওয়্যার ডিজাইন করতে হয়।
কি কি গুণ লাগবে বিশ্বের আধুনিকতম এ বিষয়ে পড়তে? তোমাকে হতে হবে খুবই অভূতপূর্ব চিন্তাবিদ, কঠোর পরিশ্রমী, মানবিক গুণসম্পন্ন বিশেষ করে দেশপ্রেমিক। পাশাপাশি ঝানু হতে হবে জীববিজ্ঞান, জৈব রসায়ন এবং প্রোগ্রমিং এ। চিন্তা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে এমন কিছু করা সম্ভব যা কেউ ভাবতেও পারে না। আজগুবি চিন্তা করতে জানতে হবে। হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী।
নেচার ম্যাগাজিনের কভারের প্রতিদিনিই জায়গা করে নিচ্ছে জাপান, আমেরিকার মলিকুলার বায়োলজিস্ট রা। এ বছর ২০১৬ তে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যিনি নোবেল পেলেন তিনি একজন মলিকুলার বায়োলজিস্ট।
সবার সব ব্যাপার সবসময় ভাল লাগেনা। বায়োকেমিস্ট্রি এই ব্যাপারটা বেশি প্রশ্রয় দেয় কারন বায়োকেমিস্ট্রি পড়তে সবই দরকার হয়। যা খুশি হতে পার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তোমার কি করতে ভাল লাগে আর কি করলে তুমি সুখী হবে। তাই চাকরির নিয়ে বেশি কথা না বলি।
তোমরা গুগল দৈত্যে সার্চ দিলেই সারাবিশ্বে এই সাবজেক্টের চাকরি কোথায় সব জানতে পারবে। আরেকটু বেশি উৎসাহী হলে এই সাবজেক্টের স্যালারি নিয়েও সার্চ দিয়ে দেখতে পার। অনেকেই মনে করতে পার যে বায়োকেমিস্ট্রিতে যেহেতু বায়োলজি আর কেমিস্ট্রি আছে তাই প্রচুর মুখস্ত করতে হয়। এই ধারনা কতটুকু ভুল সেটা বুঝতে ইউটিউবে বিখ্যাত Eric Lander এর লেকচার দেখতে পার। এই ভদ্রলোক গণিত শাস্ত্রে পিএইচডি শেষে এখন MIT তে মলিকুলার বায়োলজি পড়ান!
বাংলাদেশের নিম্নোক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বিষয়টি পড়ানো হয়:
1. Dhaka University
2. Jagannath University
2. Jagannath University
3. Jahangirnagar University
4. Chittagong University
5. Rajshahi University
6. Shahjalal University of Science & Technology
7. Mawlana Bhashani Science & Technology University
8. Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science and Technology University
এছাড়াও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি পড়ানো হয়।
Post a Comment